শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

গল্প ১ - হাফিয

রাত ২ টা ৩৮ মিনিট। দিপ্ত একা একা রাস্তা দিয়ে হাটতেছে।

কোনো মতে বাসা থেকে পালাইছে সে। বাসার দরজা খুলতেই তার ১ ঘণ্টা লাগছে। অনেক সাবধানে দরজা খুলতে হইছে তাকে যাতে ওর আব্বা আম্মা টের না পায়।
আন-মনে হাটতেছে সে।ঢাকার কোনো এক গলির ভিতর দিয়ে। ২-১ টা কুকুর ঘেউ ঘেউ করতেছে। অথচ কোনো দিকেই খেয়াল নাই তার। সব কিছু কেমন জানি নিস্তব্ধ।

মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। কঠিন পরিস্থিতি তার সামনে। পুরোনো দিন গুলোর কথা খুব মনে পরছে।
এতো রাতে বাসা থেকে পলায়ন করার কারণ পায়েল নামের একটি মেয়ে।

দিপ্ত,পায়েল কে ১১ টি বছর ধরে চেনে। ক্লাস ওয়ান থেকেই তারা বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু। সুখ দুঃখ সব কিছুর মধ্যেই তারা এঁকে অপরের খুব কাছে ছিল।
দিপ্ত, পায়েল কে তার বন্ধু মনে করত। কিন্তু পায়েল দিপ্ত কে ভালবেসে ফেলেছিল যা সে কখনই দিপ্ত কে বুঝতে দেয় নি।

৩ বছর আগের ঘটনা, দিপ্ত তখন ক্লাস এইট এ পরে। স্কুল এ তার একটি মেয়ে কে খুব ভালো লাগে, সেই ভালো লাগা
ধীরে ধীরে ভালবাসায় পরিণত হয়..মেয়েটির নাম ছিল বর্ষা |

দিপ্ত,, পায়েল কে সব কিছুই বলত। তাই সে পায়েল কে বর্ষার কথা বলল এবং পায়েল এর কাছে সাহায্য চাইলো। সব কষ্ট চেপে রেখে পায়েল, দিপ্ত কে সাহায্য করলো।

দিপ্তর সাথে বর্ষার সম্পর্ক হলো। তবুও সব জেনেও পায়েল শুধু দিপ্ত কেই ভালবাসত।
আজ ২ বছর ১০ মাষ পেরিয়ে গেছে।
দিপ্ত আর বর্ষার সম্পর্ক টা ভালোই চলতেছিল কিন্তু ভুল বুঝা বুঝির ভাঙন সেটা কে গ্রাস করে নিল।

সম্পর্কের ভাঙন দিপ্ত কে ধীরে ধীরে সব কিছু থেকে আলাদা করে দিতে লাগল। পায়েল সবই জানত। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলত না।

অনেক সাহস সঞ্চয় করে একদিন পায়েল, দিপ্ত কে তার মনের কথা বলল।
দিপ্ত বর্ষা কে মনে প্রানে ভালবাসত, পায়েল এর কথা কখনই সে ওভাবে ভেবে দেখে নি।

তাই সে পায়েল কে 'না' বলে দেয়। পায়েল ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু দিপ্ত যে শুধু বর্ষা কেই ভালবাসত।

অসহায় দিপ্ত কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছিল না।
এক সপ্তাহ পর দিপ্ত একটা খবর শুনল।
খবর টা শুনে দিপ্তর সবকিছু অন্ধকার মনে হল। কি করবে বুঝতে পারছিল না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল।

পায়েল অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিল। তবে মারাত্মক না, অল্প। এরি মধ্যে একদিন সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। কয়েকটা টেস্ট করে জানা গেলো পায়েল ব্লাড ক্যানসার এ ভুগতেছে।
নিজের কান কে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল দিপ্তর। কথা বলার মতো শক্তিও তার ছিল না।২-৩ দিন খুব কষ্টে কাটল তার। নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করলো সে। পায়েল এর হাতে সময় ছিল ২ মাস। এরি মধ্যে চিকিৎসার জন্য ওর আব্বা ওকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার বাবস্থা করতে লাগলেন।যদিও ওর বাঁচার সম্ভাবনা খুব ই কম ছিল।
বর্ষার প্রতি ভালোবাসা আর নিজের দুঃখ গুলো কে মুছে ফেলল দিপ্ত। পায়েল এর সাথে সেই পিচ্চি কালের বন্ধুটির মতো আচরণ করতে লাগল।

এখন দিপ্ত সব কিছুই জানে। পায়েল তাকে কত টা ভালবাসা আজ তা সে বুঝতে পারছে।
কিন্তু কিছুই যে করার নাই। এই কয়েকটি দিনের জন্য মেয়ে টিকে খুশি রাখতে চায় সে| তার প্রাপ্য ভালবাসা টুকু দিতে চায়।

আর দুই দিন পর ই পায়েল আমেরিকা চলে যাবে। শেষ মুহূর্তে পায়েল এর ভালবাসা স্বীকার করে নেয় দিপ্ত।
কিন্তু মন থেকে বর্ষা কে কোনো মতেই ভুলতে পারে নাই।পায়েল সব ই জানে। কিন্তু মেয়ে টা কিচ্ছু বলে না। নীরবে সহ্য করে সব।

এই ২ টা দিনের জন্য পায়েল কে নিজের করে নিয়েছে দিপ্ত।
একটু আগেও পায়েল এর সাথে ফোনে
কথা বলছিল দিপ্ত।
পায়েল শুধু বলল যে "দিপ্ত, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে"

কথা টা শোনা মাত্র বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সে।

হাঁটছে...
অতীত দিন গুলোর কথা চিন্তা করছে....
জানে না,,কি হবে....

*আমেরিকা যাওয়ার ঠিক ৩ দিন পর পায়েল মারা যায়..

আজও দেখি দিপ্ত কে, কেমন যেন উদাস,, মন মরা।
বর্ষা, দিপ্তর কাছে মাফ চেয়ে অর জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছিল কিন্তু দিপ্ত সেই সুযোগ টা আর দেয় নি।

পায়েল এর একটা আংটি আছে দিপ্তর কাছে.. মাঝে মাঝে দেখি সেটার দিকে তাকিয়ে বির বির করে দিপ্ত কি যেন বলছে.....

জানি না......
জানতেও চাইনা.....

লিখেছেন - হাফিয

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

No spam comment please. I will delete out of topic comment.